মামুন পারভেজ:
অচল হওয়ার প্রায় ৫০ ঘণ্টা পরে আংশিক কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এর আগে গত ২৬ মার্চ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সারা দেশে হঠাৎ করে ফেসবুকে লগইন করা থেকে শুরু করে মেসেঞ্জারে কিছুই করা যাচ্ছে না। ফেসবুক সেবা সীমিত থাকায় অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খবর ও যোগাযোগ হতে বিছিন্ন রয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব এবং বিশে^ করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। এছাড়া বিপাকে পড়েছেন ই-কমার্স ও অনলাইন প্লাট ফর্মের ব্যবসায়ীরা।
অনলাইনে বিজনেসের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম ফেসবুক। ইন্টারনেট গতি ধীর ও ফেসবুক বন্ধ হওয়ায় গত দুইদিনে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ। তার মধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেন ৮৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা করে প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা, যার অর্ধেকই নারী। উদ্যোক্তারা মাসে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন। তাতে প্রতি মাসে সম্মিলিত বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১২ কোটি টাকা। ফেসবুক বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসায় গত দুই দিনে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে এই সমস্যার স্পষ্ট কারণ জানানো না হলেও ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারাই বিষয়টি বলতে পারবে।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বজনদের সাথে প্রবাসীরা অনেকেই যোগাযোগ করেন মেসেঞ্জার এ্যাপের মাধ্যমে। শুক্রবার বিকেল থেকে মেসেঞ্জার কাজ করছে না। তাই প্রবাসে থাকা স্বজনদের সাথে যোগাযোগ অনেকে যোগাযোগ করতে পারেননি। বিকল্প মাধ্যম (প্রক্সি সফটওয়ার) ব্যবহার করে লগইন করতে পারলেও ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়ায় তা দিয়ে খুব বেশি একটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চলমান বিরোধিতার প্রেক্ষিতে ফেসবুকের সেবা সীমিত করে রাখা হয়েছে।
অনলাইন প্লাট ফর্ম ফেসবুকে কাপড়ের বিজনেস করেন সোমা আক্তার। তিনি জানান, গত দুই দিন ফেসবুক বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিদিন আমার পেইজে ১০ থেকে ১৫ টি শাড়ি অর্ডার পেতাম। আমার মত অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে বিজনেস করে এখন সাবলম্বী। হঠাৎ করে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এধরেন সিদ্ধান্ত খুবই হতাশাজনক।
এ বিষয়ে শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান টেক জায়ান্ট ফেসবুক জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে ফেসবুকের সেবা সীমিত করার ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। এ ঘটনার ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত জানতে কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের সেবা বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে এর আগেও ইন্টারনেট সেবা সীমিত করা হয়েছিল।’
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও বলছে, ‘মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কার্যকর যোগাযোগের জন্য যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রয়োজন। তাই এমন সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুকের সেবা সীমিত রাখার ঘটনা উদ্বেগজনক।’
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই তাদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারছিল না। কেউ কেউ প্রবেশ করলেও স্বাভাবিক সেবা পাচ্ছিল না।
ফেসবুক ব্যবহারকারী তুহিন বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই ফেসবুকে ঝামেলা হচ্ছিল। রাত থেকে একেবারেই কোনো কাজ করছে না। ফেসবুক সাইট অন হচ্ছে না। মেসেঞ্জারে ছবি পাঠাতে পারছি না। টেক্সট যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘অফিসের কাজে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ব্যবহার করা লাগে। কিন্তু গতকাল থেকে কী সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারছি না। যে কারণে অফিসের কাজে ঝামেলা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেছে। তারাই বলতে পারবেন কেন বন্ধ আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারেরই অংশ। তারা নিঃসন্দেহে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই এটা নিয়ন্ত্রণ করছে।