সিলেটের একমাত্র বৃহৎ মানিকপীর (রহ.) কবরস্থান ব্লক পদ্ধতিতে বিন্যাসের কাজ এগিয়ে চলছে। পুরো কবরের মাটিকে আটটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ব্লকের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্লকের মাধ্যমে প্রতিটি কবরে নাম্বার বসানো হবে। এতে করে যে কেউ সহজে তার স্বজনের কবর খুঁজে বের করতে পারবে। একইসাথে বিক্ষিপ্তভাবে কবর দেয়ার পুরনো পদ্ধতিরও অবসান ঘটবে। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ২০২২ সালে।
হজরত শাহজালালের (রহ.) সফরসঙ্গী হিসেবে আরো ৩৬০ আউলিয়া সিলেট এসেছিলেন, যাদের অন্যতম হযরত মানিকপীর (রহ.)। নগরীর কুমারপাড়া-নয়াসড়কের পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর রয়েছে ওই অলির মাজার। মাজারের নিচের অংশটুকু কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেই কবরস্থানের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এজন্য মানিকপীর টিলার বেশ কিছু অংশ কেটে সমতল করা হয়। এ সময় কাটা পড়ে অনেকগুলো পুরনো গাছ। সমতলের পর কবরের জন্য পৃথক ব্লকের কাজ শুরু হয়, ২০২০ সালের শুরুতে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, এ. বি. সি. ডি. ই. এফ. জি. এইচ-এভাবে আটটি ব্লক অথবা জোনে পুরো কবরস্থান ভাগ করা হবে। এই আটটি ব্লকে থাকবে বত্রিশশ’ কবর। তার মধ্যে এ ব্লকে ধাকবে ৫৯০, বি-ব্লকে ৩৭৯, সি-ব্লকে ৫৯১, ডি-ব্লকে ৫০১, ই-ব্লকে ২৮৬, এফ-ব্লকে ২০৭, জি-ব্লকে ৫৬৫ ও এইচ-ব্লকে থাকবে ১০০টি কবর। সেই কবরগুলোতে বসানো হবে নাম্বার। নাম্বার থাকার ফলে কবর খুঁজতে আর বেগ পেতে হবে না মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। যে কেউ সহজে বের করতে পারবে তার মা-বাবা কিংবা আত্মীয়ের কবর।
শবেবরাতের রাত মানিকপীর টিলায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরো সীমানা দৃষ্টিনন্দন গার্ডওয়াল বেষ্টিত। ইতোমধ্যে পশ্চিমের ব্লকটির কাজ শেষ হবার পথে। কবরের চারপাশে জ্বলছে নতুন বাতি। কবরের ভেতরে অভ্যন্তরিণ যে সড়ক করা হয়েছে তার কাজও শেষের দিকে। চলছে টিলার উপরে উঠার সিঁড়ির কাজ। বর্ষার সময় কবরে যাতে পানি না জমে এজন্য ভেতরে রাখা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
কবরস্থান ব্লক ওয়ারির পাশাপাশি মানিকপীর টিলার আরো কিছু কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কবরস্থানে ফটক ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, মূল মাজারে ওঠার জন্য সিঁড়িসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া মরদেহের গোসল দিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের সহকারি প্রকৌশলী ওংশুমান ভট্টাচার্য জানান, ব্লক করার সময় যে পরিমাণ গাছ কাটা পড়েছে সেই শূন্যতাও পূরণ করা হবে, অর্থাৎ নতুন গাছ লাগানো হবে চারপাশে। গাছের সাথে প্রতিটি ব্লকে লাগানো হবে সবুজ ঘাস। তবে সেই কাজ এখনো শুরু হয়নি। সবগুলো ব্লকের কাজ শেষে গাছ এবং ঘাস লাগানো হবে। নতুন করে কবরস্থান সাজানোর ফলে ভেতরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাও প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে যেখানে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করা হবে সেই অংশটুকুও পাকা করা হয়েছে। এর ফলে বৃষ্টির সময় দুর্ভোগ পোহাতে হবেনা মুসল্লিদের।
সিটি কর্পোশেনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, ব্লক সিস্টেম করার ফলে জঞ্জালমুক্ত হয়েছে পুরো মানিকপীর টিলা। বেদখলে থাকা অংশটুকুও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এটি মানুষের গভীর অনুভূতির জায়গা। জীবিতবেলায় যেভাবে একজন মানুষের একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে, মরণের পরে কবরের ঠিকানাও হয়ে যাবে এই ব্লকের ফলে। অনায়াসে একদিকে প্রবেশ করে আরেক দিকে বের হবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্লক সিস্টেম হয়ে গেলে আর কেউ বিক্ষিপ্তভাবে কাউকে কবর দিতে পারবেন না। আর পুরো প্রকল্পের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান জানান, মোট পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুরো কাজ সম্পন্ন হলে একটি আধুনিক কবরস্থানে পরিণত হবে এটি।
যোগাযোগ করা হলে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, পুরো কবরস্থান বিজ্ঞানসম্মত এবং পরিকল্পিত। কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের মধ্যে একটি দৃষ্টিনন্দন কবরস্থান হবে মানিকপীর রহ. কবরস্থান। ব্লক পদ্ধতি হবার ফলে একটি কবরের মাঝে অনেকগুলো কবর হলেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার স্বজনের কবরকে চিহ্নিত করতে পারবে।