নিজস্ব প্রতিবেদক : মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না, সঙ্কটে কৃষি জমি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এতে কমছে চাষাবাদ। পাশাপাশি বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। দেদারসে কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে। মাটিবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার ৫নং আউশকান্দি ইউপিধীন অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র পারকুল পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকার দক্ষিণে হাচনখালী নামক হাওড় হইতে অবাধে অসংখ্য কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটি আবার ট্রাক ও ট্রাক্টর গাড়িতে বহন করে বনগাঁও সড়ক দিয়ে মহাসড়ক ব্যবহার করে বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছে। এতে ঐ এলাকার পরিবেশসহ রাস্তায় পথচারী ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা ধুলাবালির জন্য ব্যাপক ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও সুফল মিলছে না। আবাদি জমির ওপরের দিকের মাটি কেটে নেওয়ায় কমছে ঊর্বরতা। তাদের শঙ্কা, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মাটির জন্য বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, একাধিক সিন্ডিকেট মাটির ব্যবসায় সক্রিয়। এতে জড়িত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত করে অবাধে কেটে চলেছেন কৃষি জমির উর্বর মাটি। ফলে কমে যাচ্ছে চাষাবাদ।
উপজেলার সচেতন মহলের অনেকেই বলেন, বেশির ভাগ মাটি কিনছেন ইটভাটার মালিক কিংবা বিত্তবান ব্যক্তিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একসময় মাটিও আমদানি নির্ভর হতে হবে আমাদের। মূলত টাকার লোভে অনেকে মাটি বিক্রিতে ঝুঁকছেন। ১০-১২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে মাটি বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাশের জমির মাটিও ভেঙে পরে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাধ্য হয়ে ওই সব জমির মাটিও বিক্রি করছেন মালিকেরা।
প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন বলেন, রাতের আঁধারে আরও অসংখ্য জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা। কিছু বললে হুমকি দিচ্ছে। মাটিখেকোরা কৃষি জমিকে আবাদ অযোগ্য জমিতে পরিণত করছে। এসব দেখেও প্রশাসন নীরব। তবে অধিকাংশ অভিযোগকারীর তীর উপজেলার পারকুল গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আনহার মিয়া ও দাউদপুর গ্রামের লিটন মিয়ার দিকে।
এ অভিযোগের বিষয়টি আনহার মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ৫/৬ ধরে মাটিকাটা হচ্ছে এ কথা সত্যি। আমি মাটি ব্যবসায়ী বা আমি মাটি কাটাচ্ছি এ কথাটি সত্য নয়।
অভিযোগ বিষয়টি স্বীকার দাউদপুর গ্রামের লিটন মিয়ার বলেন- আমি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব নবীগঞ্জ কমিটির কোষাধ্যক্ষ। আমাকে এসব বলে লাভ নেই।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। মাটি কাটার সাথে জড়িতদের খোঁজে বের করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (হবিগঞ্জ) আখতারুজ্জামান বলেন- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছু নেই। এটি এসিল্যান্ড ও কৃষি কর্মকর্তার এখতিয়ার।
বিষয়টি জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার এ কে এম মাকসুদুল আলম বলেন- জমির উপরের ৬ ইঞ্চি মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টাকার লোভে কিছু মানুষ কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে জমিকে নষ্ট করছেন। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সাথে কথা বলবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান শাহরিয়ার বলেন- বিষয়টি আমি উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। এরা খুব চালাক প্রকৃতির। সরেজমিনে গিয়ে এদের পাওয়া যায় না। তাই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।